ওয়ারেন, ১৫ সেপ্টেম্বর: দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বেদান্ত সোসাইটির স্বামী সর্বদেবানন্দ বলেছেন, আমরা সকলেই এখানে উপস্থিত হয়েছি আমাদের অন্তর্নিহিত সত্য দেবত্বকে জাগ্রত করার জন্য। এই আহ্বান বহু আগে থেকেই এসেছে, স্বামী বিবেকানন্দের মাধ্যমে। তিনি বলেছিলেন, মানবজীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো নিজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা দেবত্বকে চিনে ওঠা এবং তা প্রকাশ করা। সেটাই প্রকৃত ধর্ম, সেটাই মানুষের অন্তর্চেতনা।
তিনি গতকাল রোববার সন্ধ্যায় নগরীর রামকৃষ্ণ আশ্রমে শ্রীশ্রী স্বামী বিবেকানন্দের ডেট্রয়েটে আগমনের ১৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশাল সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বেদান্ত সমাজ, সেক্র্যামেন্টোর স্বামী প্রপন্নানন্দ, বেদান্ত সোসাইটি টরন্টোর স্বামী কৃপাময়ানন্দ, নিউ ইয়র্কের বেদান্ত সোসাইটি স্বামী সর্বপ্রিয়ানন্দ, বিবেকানন্দ বেদান্ত সোসাইটি শিকাগোর স্বামী ইশত্মানন্দ, শিকাগোতে ভারতের কনস্যুলেট জেনারেল শ্রী সোমনাথ ঘোষ, বিশিষ্ট চিকিৎসক ও দার্শনিক ডা. দেবাশীষ মৃধা এবং বাংলাদেশ কনসুলেট জেনারেল মুনির চৌধুরী প্রমুখ।

স্বামী সর্বদেবানন্দ বলেন, “আমরা হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান এসব নাম আমরা নিজেই দিয়েছি। তবে স্বামী বিবেকানন্দ দেখেছেন, সকলের ভেতরে একই অন্তর্নিহিত দেবত্ব বিদ্যমান। সেই দেবত্ব প্রকাশের মাধ্যমে মানুষ সত্যিকারের মানবিক হয়ে ওঠে। যখন মানুষে দেবত্ব প্রকাশ পায়, তখন তার মধ্যে সমবেদনা, ভালোবাসা ও নিঃস্বার্থতা ফুটে ওঠে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “স্বামী বিবেকানন্দ সারা বিশ্বকে এককভাবে দেখতেন। নিজের কথা কখনও ভাবতেন না; তিনি চেয়েছিলেন সকলের মঙ্গল। তিনি বলেছেন, ‘নিঃস্বার্থতা-ই হলো ভগবান’। মূল বিষয় হলো, মানুষের মধ্যে দেবত্ব জেগে উঠেছে কি না, তা পরীক্ষা করা।”
স্বামী সর্বদেবানন্দ বলেন, “মন্দিরে যাওয়া, মসজিদে যাওয়া সবই ভালো। কিন্তু যদি তা জীবনে কোনো পরিবর্তন না আনে, যদি তা মানুষের মধ্যে দেবত্বের প্রকাশ ঘটায় না, যদি মানুষকে ভালোবাসতে শেখায় না—তাহলে সবই অমূল্য। ধর্ম হলো বাহ্যিক আড়ম্বর নয়। ধর্মের সত্যিকারের শক্তি আসে তখন, যখন এটি মানুষের জীবনে আলোকবর্তিকা হয়ে ওঠে এবং মনুষ্যত্বকে দীপ্ত করে।”
তিনি আরও বলেন, “মত থাকুক বা দল থাকুক ভগবান সম্পর্কে প্রত্যেকের নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে। তবে স্বামী বিবেকানন্দেন মূল শিক্ষা হলো, ভগবান লাভ বা ঈশ্বর লাভ যা-ই হোক না কেন, তা যখন মানুষের অন্তরে জাগ্রত হয়, তখনই তা প্রকৃত ধর্মের চেতনা প্রকাশ পায়। সেই চেতনা বিকশিত করার জন্য একটি স্থান প্রয়োজন, যেখানে আমরা একত্রিত হতে পারি, নিরন্তর চিন্তা করতে পারি এবং উপলব্ধি করতে পারি যে আমরা মানুষ, কিন্তু একই সঙ্গে ঈশ্বরের সৃষ্টি। আমরা তাকে ভগবান বলি, গড বলি বা যেকোনো নামে অভিহিত করি—কিন্তু মূলত আমরা একটিই স্বত্ত্বার সঙ্গে যুক্ত। যদি আমরা সত্যিকারের চেতনা নিয়ে নিজেকে উন্নত করি, তাহলে আমরা দেবতা হতে পারি।”
তিনি সংক্ষেপে বলেন, “আজ আমাদের সংকল্প হওয়া উচিত—সবাই মানুষ হব, দেবতা হব। এখানে দেবতা কোনো দৈব শক্তি নয়; দেবতা হলো মানুষের মধ্যে উদ্ভাসিত চেতনা, সমবেদনা, ভালোবাসা ও নিঃস্বার্থতার প্রকাশ। প্রত্যেক মানুষের জীবনে যদি কোনো পরিবর্তন না আসে, তাহলে ধর্মের অর্থ কী হবে? ধর্মের সত্যিকারের লক্ষ্য হলো মানুষের জীবনকে পরিশুদ্ধ ও উন্নত করা, যাতে মানুষ তার অন্তর্নিহিত দেবত্বকে প্রকাশ করতে পারে।”